বাংলাদেশে এখন কাগজে-কলমে ধর্মনিরপেক্ষতার অস্তিত্ব বর্তমান
কিন্তু সমাজমানস এখনোও সে অভিশাপ থেকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করছে।তা সত্ত্বেও
ধর্মনিরপেক্ষতা নামের এই বিষধর সর্পটিকে ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিতে ইতোমধ্যেই Ground work শুরু হয়ে
গেছে।বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করার আগে ইসলামী বিশ্বে বাংলাদেশের গুরুত্ব এবং তার
পরিপ্রেক্ষিতে এদেশকে নিয়ে ইহুদী-খৃষ্টান-কম্যুনিষ্ট চক্রের কি আয়োজন তা মাথায়
রাখা একান্ত প্রয়োজন।
ভৌগলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এক প্রকার কুফরির
সমুদ্রে এক খন্ড ইসলামী দ্বীপের মতো।উত্তর-পশ্চিমের পুরোটা এবং পূর্বের কিয়দাংশ
জুড়ে ব্রাম্মণ্যবাদী ভারতের আধিপত্য।পূর্বের বাকী অংশের মায়ানমার এবং দক্ষিণের
শ্রীলংকা বৌদ্ধদের অভয়ারণ্য; যাদের মাথার উপর মহীরুহ হয়ে ছায়া দিচ্ছে চীন।মুসলিম
সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে ইন্দোনেশিয়ার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান যা প্রতিবেশীদের
গাত্রদাহের প্রধানতম কারণ।ঢাকাকে “মসজিদের শহর” বলে আখ্যায়িত করা এবং এদেশকে “অলী-আউলিয়ার দেশ” হিসেবে পরিচয়
দেয়াটা স্বভাবতই ইসলামবিদ্বেষীদের মনে আগুন ঢেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও
বেশ গুরুত্ব অর্জন করেছে বলেই মনে হয়।৫ই মে লং-মার্চের পরপরই ব্রিটেন নড়েচড়ে
বসে।কারণ বাংলাদেশের নব প্রকাশিত নাস্তিক শক্তির পেছনে মূলত ইউরোপিয়ান লবিগুলোই
মূল ইন্ধনদাতা।তাই লংমার্চের পরদিনই “বিবিসি” তাদের বিশেষ প্রতিনিধি পাঠিয়ে শেখ হাসিনার কাছে নিশ্চয়তা চায় ব্লাস্ফেমি
আইন চালু করা হবে কি হবে না সে বিষয়ে।১৩ দফায় খৃষ্টান মিশনারিদের অপততপরতা বন্ধের
কথা বলা আছে বিধায় আমেরিকাও উদ্বিগ্ন।জার্মানীর রাষ্ট্রদূত ১৩ দফা নিয়ে বিরূপ
মন্তব্য করতে দ্বিধাবোধ করেনি।এক্ষেত্রে অন্য কোন ইস্যু হলে মিডিয়াগুলো মুখে ফেনা
তুলে ফেলতো জাতীয় বিষয়ে বহির্বিশ্ব নাক গলাচ্ছে বলে।পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে
খৃষ্টানদের ‘বাফার স্টেট’ থিওরী আছে
বলে নতুন পোপও বাংলাদেশকে নিয়ে কম মাথা ঘামাচ্ছে না, যার ভুমিকা স্বরূপ সাভার
ট্র্যাজেডি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।রাশেদ খান মেনন সরাসরিই বলেছেন- বাংলাদেশে Islamization
করার প্রক্রিয়া কখনো মেনে নেয়া হবে না।
এ সমস্ত ইসলাম বিরোধী লবিগুলোর কাছে “আরব বসন্ত” জলবসন্তের মতই দগদগে ঘা।তাই এরা সহজেই
দক্ষিণ এশিয়াতে নতুন কোন তাহরির স্কয়ার হওয়াকে যে কোন মূল্যেই দমন করবে-এটাই
স্বাভাবিক।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের তৌহীদি জনতাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে
তারা কি ধর্মনিরপেক্ষতার লেবাসে গুজরাট কি কাশ্মীরী জীবনযাপন করবেন, নাকি মালয়শিয়া
কি ইন্দোনেশিয়ার পথে হাটবেন?
ব্রিটিশ উপনিবেশকালেও বাংলার মুসলমানরা সংখ্যাধিক্য ছিলো,
তারপরও তারা নিজ ধর্ম কর্ম স্বাধীনভাবে করতে পারছিলেন না বলেই ‘ফরায়েজী আন্দোলন’ সহ নানান বিপ্লবে বাধ্য
হয়েছিলেন।একদিকে ইংরেজদের সাথে অস্তিত্বের লড়াই অন্যদিকে হিন্দুদের সাথে আদর্শের
লড়াই।ব্যাপারটা বুঝতে একটু ঘুরে আসা যাক।“পাদ্রীরা
হাট,ঘাট,বন্দর,জেল,হাস্পাতাল ও স্কুল সর্বত্রই ধর্ম প্রচার করতে থাকে,প্রত্যেক
স্কুলে বাইবেল শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।ছাত্রদের প্রশ্ন করা হতো-তোমাদের প্রভু
কে এবং কে তুমাদের মুক্তিদাতা? ছাত্ররা শেখানো খৃষ্টীয় পদ্ধতিতেই উত্তর দিতো”।(সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস, আহমদ ছফা,পৃ= ১২,১৩,১৪)
মীর নেসার আলী কেন আন্দোলন শুরু করেছিলেন তার প্রমাণ স্বরূপ
উল্লেখ করা যায়- জমিদার রামায়ন বাবু,কৃষ্ণদেব রায় ও গৌরপ্রসাদ চৌধুরী সহ
প্রভৃতি জমিদারগন মিলে আদেশ জারি করেন যে “যাহারা নিসার আলীর শিষ্যত্ব গ্রহন
করিবে, দাড়ি রাখিবে,গোঁফ ছাটিবে,তাহাদের প্রত্যেককে ফি দাড়ির উপর আড়াই টাকা এবং ফি
গোফের উপর পাঁচ সিকা খাজনা দিতে হইবে।মসজিদ প্রস্তুত করিলে প্রত্যেক কাঁচা মসজিদের
জন্য পাঁচশত টাকা এবং পাকা মসজিদের জন্য এক সহস্র টাকা জমদার সরকারে নজর দিতে
হইবে।সন্তানের আরবী নাম রাখিলে প্রত্যেক নামের জন্য খারিজানা ফি পঞ্চাশ টাকা
জমিদার সরকারে জমা দিতে হইবে।গো-হত্যা করিলে হত্যাকারীর দক্ষিন হস্ত কাটিয়া দেওয়া
হইবে,যেন সে ব্যাক্তি আর গো-হত্যা করিতে না পারে।যে ব্যাক্তি সংগ্রামি নিসারকে নিজ
বাড়ীতে স্থান দিবে তাহাকে ভিটা হইতে উচ্ছেদ করা হইবে”। (A.R Mallik: British
Policy and the Muslims in Bengal,P=78-79. সিদ্দীকী প্রণীত “শহীদ তিতুমীর”, পৃ=৪৫-৪৯, এবং অমলেন্দু দে,
পৃ=১০২-১০৩)
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সংবিধানে ইসলামের
অবস্থান না থাকলে কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতার স্থান হলে জনজীবনের এই দশাই হয়।
মাওলানা শরীয়তুল্লাহ কেও একই কারনে রাজপথে নামতে হয়েছিলো।“ঐ সময় হিন্দু জমিদারগন মুসলমান কৃষকদের নিকট কালীপূজা দূর্গাপূজা
ইত্যাদীতে কর আদায় করতেন।শুধু তাই নয়,মুসলমান প্রজাদের জন্য ঈদুল আযহা পর্বে গরু
ব্যবহার বন্ধ ছিলো।মাওলানা শরিয়ত উল্লাহ পূজায় চাদা দিতে নিষেধ করেন এবং গরু
ব্যবহারে উতসাহ প্রদান করেন”। (চেপে রাখা ইতিহাদ, গোলাম আহমদ
মোর্তুজা, পৃ= ২১৫)
No comments:
Post a Comment