মুসলিম পরিচয়ের জন্য সময়টি সত্যিই কঠিন। বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে। ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসে মেডিক্যালের ছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় পুরো ভারত জুড়ে। দিল্লীসহ সমগ্র ভারতে সাধারণ, অতি অসাধারণ এমনকি ফুটপাতের বাসিন্দা থেকে নিয়ে নামিদামি তারকা, লেখক-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী, সুশীল-কুশীল সবাই একযোগে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে দলে দলে লোক মুখে কালো কাপড় বেঁধে, মোমবাতি হাতে রাস্তায় নেমে আসে। বলাবাহুল্য, ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং ঘৃণিত একটি কাজ। কিন্তু আমরা আশ্চর্য হই, যখন একই ধরনের অপরাধ নির্বিচারে মুসলিম নাগরিকদের সঙ্গে করা হয়, এবং তখন ওসব সুশীলের সুশীলপনায় কোনো উৎসাহ জাগে না। যে ভারত একজন নারীর সম্ভ্রমহানির খবরে উত্তাল হয়ে উঠলো, সেই ভারতে মুসলিম নারীদের গণসম্ভ্রমহানির খবর চাপা পড়ে থাকে সংবাদ সীমানার অনেক অনেক বাইরে! মুসলিম বলে তারা কি তবে মানুষ নয়!
একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে, ‘ফবসড়পৎধপু রিঃযড়ঁঃ ভৎববফড়স রং ফবসড়হ পৎধুু’- ‘স্বাধীনতাহীন গণতন্ত্র এক উন্মত্ত দানব।’ পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র কীভাবে বৃহত্তম সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করে, ভারত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ... সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণাব্যঞ্জক দৃষ্টিভঙ্গি ভারতীয় জনসমাজে নতুন কিছু নয়। তবে এটি ব্যাপকতা লাভ করে ’৪৭-এর দেশ বিভক্তির পর থেকে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের উদরে জন্ম নেওয়া অতিকায় দানবটি সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষের জীবন, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে গিলে খেতে সবসময়ের
জন্য প্রস্তুত। এজন্য গুজরাটের ভয়াল স্মৃতিই বারবার ফিরে ফিরে আসে। ভারত যখন আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নসিহত খয়রাত করে তখন বজরং, হিন্দুসভা ও অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর নির্মম নিপীড়নে তড়পাতে থাকে মজলুম মানবতা। দলিত ভয়েসের সম্পাদক ভি টি রাজশেখর হিন্দু জঙ্গিবাদের বিষাক্ততা উপলব্ধি করে লিখেছিলেন, ‘জন্মসূত্রে আমি একজন হিন্দু। কিন্তু এখন আর আমি হিন্দু নই, আমি একজন মানুষ। কোনো হিন্দু মানুষ হতে পারে না।’ ভারতের আজকের বাস্তবতা আসলে এমনই। যে দেশের মানুষ অতি পবিত্র জ্ঞানে গবাদি পশুর মলমূত্র পান করে তাদের মন-মানসিকতা তো চরম জঘন্য ও কুৎসিতই হবে, এটাই স্বাভাবিক।
ভূখ-গত দিকে থেকে ভারত বিশাল একটি দেশ। ২৮টি রাজ্য আর ছয়টি প্রাদেশিক সরকারের এ দেশটিতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। মুসলিমরা হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি। এছাড়া আছে শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও নানা আদিম ধর্মাবলম্বী জাতি ও নৃ-গোষ্ঠী। ১৯৪৭ সালে দখলদার ইংরেজ কর্তৃক দেশটির সর্বময় কর্তৃত্ব হিন্দুদের হাতে সমর্পণের পর থেকে ওই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ও সংঘর্ষ বিরাজ করছে। দেশভাগের ওই সময়টিতে হিন্দুদের হাতে প্রচুর মুসলমান প্রাণ হারান। সহায়-সম্পদ হারিয়ে বিপুল মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও তৎকালীন পূর্ব বাংলায় হিজরত করতেও বাধ্য হন। ইতিহাসের ভয়াল সেই নৃশংসতায় অদ্যাবধি ভাটা পড়েনি।
মরছে মানুষ বেশুমার
দাঙ্গা-হাঙ্গামা বুঝাতে আমরা সাধারণত ‘মারামারি’ শব্দটা ব্যবহার করি। যেখানে ‘মারা’ এবং ‘মারি’
অর্থাৎ দুই পক্ষের যৌথ সংঘাত-সংঘর্ষকে বুঝানো হয়। ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ কথাটির মধ্যেও এ ধরনের কিছু বুঝানো উদ্দেশ্য হতে পারে। কিন্তু ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আসলে মারা হচ্ছে এক পক্ষে আর মরছে অন্য পক্ষ। সুতরাং দাঙ্গা বা মারামারি কথাটা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরে চলছে সাম্প্রদায়িক নিধনযজ্ঞ। সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্যে, উগ্রবাদী হিন্দুদের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ সাধারণ মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নগরকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে মুসলিমবিরোধী তৎপরতার মাত্রা চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।
মুসলিমবিরোধী এ দাঙ্গার ঘটনার সূত্রপাত ঘটে কাউয়াল গ্রামে যখন কয়েকশ’ হিন্দু কৃষক একত্রিত হয়ে কথিত হিন্দু হত্যাকা-ের বিচার দাবি করতে থাকে। ‘বউ-বেটি সম্মান’ নামে এক জনসমাবেশে হিন্দু জাঠ সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক মানুষ দূর দূরান্ত থেকে যোগ দিতে আসে। সেখানে নেতৃস্থানীয় হিন্দুদের জ্বালাময়ী ভাষণে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়ানো হয়। আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, উগ্রপন্থী এ লোকগুলোর দাবি ছিলো, ‘গত মাসে একটি হিন্দু মেয়েকে মুসলমান ছেলেরা উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গেলে মুসলমানদের হাতে কয়েকজন হিন্দু নিহত হয়।’
হিংসাত্মক আক্রমণের তৃতীয় দিনে মুজাফফরনগরের অবস্থা সম্পর্কে বিবিসি জানাচ্ছে, হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর মতো কোনও মাল-মসলারই সেখানে অভাব নেই। প্রদেশটির একের পর এক গ্রাম থেকে আতঙ্কিত মানুষ ট্রাক্টর বোঝাই হয়ে ভিড় করছেন সদরে। প্রত্যন্ত এলাকার বহু গ্রাম জনশূন্য, জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি থেকে এখনও ধোঁয়া উঠছে। দাঙ্গায় প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এখনও প্রচুর মানুষ নিখোঁজ আছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে। শুধু মুজাফফরনগর নয়, দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের জেলাতেও। শামেলি জেলার ম্যাজিস্ট্রেট পি কে সিং বলেন, শামেলিতে দাঙ্গার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে একজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা রেকর্ড করেছে পুলিশ।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে উত্তর প্রদেশ সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য। চিনিকলের জন্য সুপরিচিত জেলাটিতে প্রচুর আখের খেত আছে। সেখানে প্রায় ২১ কোটি মানুষের
বসবাস। রাজধানী দিল্লি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রদেশটির দাঙ্গা-আক্রান্ত মুজাফফরনগর জেলাতে বহু মুসলমান বাস করেন। ভারতের যেসব প্রদেশ মাঝেমধ্যেই হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার কবলে পড়ে উত্তর প্রদেশ তার একটি। এখানে চলতি বছর এরই মধ্যে ৪৫১টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে আর গত বছর দাঙ্গার সংখ্যা ছিলো ৪১০টি।
যেভাবে সূত্রপাত
একটা ফেইক পাকিস্তানি ভিডিওকে বিজেপি [এমএলএ] এবং উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী হিন্দুসভা ফোর্স অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে দাঙ্গা বাধানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। ফেসবুকে ছড়ানো ওই ভিডিওটিতে বোনের সম্ভ্রম রক্ষার্থে ভাইয়ের জীবনহানির ঘটনা দেখানো হয়, অথচ এটি পাকিস্তানের অন্য একটি ঘটনার ভিডিও। এর সঙ্গে হিন্দুগোষ্ঠী বা ভারতের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১ সেপ্টেম্বর থেকেই উগ্রবাদী হিন্দুরা সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে অপপ্রচার চালাতে থাকে। ‘ডব ঃযব ঐরহফঁং’ নামের একটি পেজ থেকে ‘২ যরহফঁং সবৎপরষবংংষু নবধঃবহ ঃড় ফবধঃয’ নাম দিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করে দাবি করা হয়, এক হিন্দু মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে এগিয়ে আসা দুই হিন্দু যুবককে দেড়শ’ মুসলমান পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ভিডিওটি কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় ৫ হাজার আইডি থেকে শেয়ার করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জানা যায়, ভিডিওটি আসলে ওই ঘটনার নয়, বরং ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তানের শিয়ালকোটের একটি ঘটনার। টুসার্কেলস ডটনেটে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
মুনাব্বর জানেন না
ফিরতে পারবেন কিনা?
মুজাফফরনগরের সব চেয়ে শোচনীয় এলাকা খুতবা গ্রাম। সেখান থেকে কয়েকজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ লোকগুলোর শরীরে আঘাত ও পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। ওই গ্রামের দোকানপাট ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় উগ্রপন্থী হিন্দু জঙ্গিরা। মনসুরপুরে গুলিবিদ্ধ এক মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। তবে প্রশাসনের দাবি, ‘শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে সিআরপি ও পুলিশ’। হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫২ জনকে।
ভারতের সরকারি তরফে অনেক কথাই
বলা হচ্ছে, কিন্তু মানুষ এখনও আতঙ্কিত। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এসব লোকজন উগ্রবাদী হিন্দুদের হামলার দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছে না। মুজাফফরনগরের হাসপাতালে শুয়ে মুনাব্বর, অনুবেশ বালিয়ানরা জানিয়েছেন তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। খুতবা গ্রামের বাসিন্দা মুনাব্বর অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার পরিবারকে। আর ওই সময় তাদের ওপর হামলা চালায় হিন্দু জঙ্গিরা। রড, লাঠি ও দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে আহত হন মুনাব্বর, তার স্ত্রী ও আট মাসের সন্তান। তারা এখন হাসপাতালে ভর্তি। আর কোনোদিন গ্রামে ফিরতে পারবেন কিনা জানা নেই তার।
সারারাত মাঠে লুকিয়ে থেকে হিন্দু জঙ্গিদের হামলার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন অনুবেশ বালিয়ান। লাঠি, তলোয়ার নিয়ে তার ওপরেও চড়াও হয়েছিলো উগ্রবাদী হিন্দুরা। পরদিন সকালে সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে।
রাজনীতির বলি সাধারণ মানুষ
মাত্র একমাস আগে কাশ্মিরের কিশওয়ারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর দুই সপ্তাহ আগে উত্তর প্রদেশে হিন্দুত্ববাদীদের অযোধ্যা যাত্রাকে কেন্দ্র করে ছড়ানো উত্তেজনার পর এবার মুজাফফরনগরের মুসলিম গণহত্যায় যেন ২০০২ সালের ফিকে হয়ে যাওয়া গুজরাট স্মৃতিই ফিরে আসছে... বৃহত্তম গণতন্ত্র ও বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষতার দেশে ২০০২ সালে যখন মুসলমানদের নির্বিচার কচুকাটা করা হচ্ছিলো তখনও ছিলো নির্বাচনের ঘনঘটা। এবারও তাই।... ওইবার বিজেপি জিতেছিলো সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে, এবারও কি তেমনটিই ঘটতে যাচ্ছে? এমন অভিযোগ খোদ ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টির। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ‘এ দাঙ্গা উদ্দেশ্যমূলক এবং বিজেপি কর্তৃক সংঘটিত। তারা আগামী ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে উগ্র হিন্দুদের ভোট পাওয়ার জন্য গুজরাটের পুনরাবৃত্তি করছে। ওই দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে চরমপন্থী হিন্দুদের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় আসে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি... বলা বাহুল্য, ধর্মীয় এই বিভাজন রেখায় লাভ হচ্ছে জঙ্গিবাদী বিজেপি তথা সঙ্ঘপরিবারের। মুজাফফরনগরের জনৈক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের চরম দুঃস্বপ্ন এখন সত্যি হতে চলেছে।’
মুজাফফরনগর রাজ্যের বিরোধী দল ‘বহুজন সমাজ পার্টি’র নেতা মেঘবতী বলেন, এ দলগুলো এমনিতে ভোট পাবে না বুঝে এখন দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে ভয় ছড়াতে চাইছে, বিশেষ করে উগ্রপন্থী হিন্দুদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
মেঘবতী দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান রাজ্য সরকার খুব দেরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার ১০ দিন ধরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে দিয়েছে এবং আমি এটা বলতে পারি, তারা রাজ্যে জঙ্গলের শাসন জারি করেছে।’
আলীগড়ভিত্তিক মুসলমানদের সংগঠন ‘মিল্লাত বেদারি মুহিম কমিটি’ প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সরকারের পদচ্যুত করার দাবি জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর শাসনের পরিবর্তে তারা রাষ্ট্রপতির শাসন চেয়েছে।
গণহত্যা যাদের নিয়তি
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ভারত ব্যাপক প্রোপাগান্ডা ছড়ালেও মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় চোখ বন্ধ করে থাকে রাষ্ট্র ও প্রশাসনযন্ত্র। দেশটির পুলিশ ও ব্যুরোক্রেসির মধ্যে একটা চক্র আছে, যারা ভীষণ সাম্প্রদায়িক। এরাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বারেবারে এ ধরনের ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। স্মরণযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, গুজরাটে ২০০২ সালে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম গণহত্যা চালানোর হুকুমের আসামী নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার অন্যতম দাবিদার। গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সেখানকার অসহায় সাধারণ মানুষ হত্যাকা-ে অভিযুক্ত হয়েও ধর্মনিরপেক্ষ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এই মানুষরূপী জানোয়ার! ভারতীয় হাইকোর্ট নরেন্দ্র মোদিকে গণহত্যার মামলা থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছে।
প্রায় ২ হাজারের অধিক মুসলিম নিধনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা এবং তার ঘনিষ্ঠ লোক এ হত্যাযজ্ঞে অভিযুক্ত হবার পরও মোদী এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। ওই সময় শত শত মুসলিম নারীকে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। পরিবারের অন্য সদস্যের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছে অসহায় নারীদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিতাদের জীবন্ত দগ্ধও করা হয়। মুসলিম মহিলারা পুলিশের কাছে তাদের সম্ভ্রম রক্ষার আবেদন জানালে পুলিশ বলেছিলো, ‘তোমাদেরকে তো শেষমেষ মেরেই ফেলা হবে। তার আগে সম্ভ্রম থাকলো কি চলে গেলো তাতে কী?’ ইতিহাসের নির্মম ওই হত্যাযজ্ঞে উগ্রবাদী হিন্দু সন্ত্রাসীরা ৫৬৩টি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো। আড়াই লাখ মানুষ হয়ে পড়েছিলো গৃহহীন। কিন্তু আহমেদাবাদের গণহত্যাই ইন্ডিয়ার শেষ মুসলিম গণহত্যা নয়। গুজরাট, আসাম, কাশ্মির আর উত্তর প্রদেশের পর আর কোন প্রদেশের পালা আসে কে জানে? তেত্রিশ কোটি দেবতার এই মানচিত্রে খোদাপরস্ত মানুষের স্থান যে দিন দিন সংকীর্ণ ও সঙ্কুল হয়ে উঠছে!
একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে, ‘ফবসড়পৎধপু রিঃযড়ঁঃ ভৎববফড়স রং ফবসড়হ পৎধুু’- ‘স্বাধীনতাহীন গণতন্ত্র এক উন্মত্ত দানব।’ পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র কীভাবে বৃহত্তম সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করে, ভারত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ... সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণাব্যঞ্জক দৃষ্টিভঙ্গি ভারতীয় জনসমাজে নতুন কিছু নয়। তবে এটি ব্যাপকতা লাভ করে ’৪৭-এর দেশ বিভক্তির পর থেকে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের উদরে জন্ম নেওয়া অতিকায় দানবটি সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষের জীবন, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে গিলে খেতে সবসময়ের
জন্য প্রস্তুত। এজন্য গুজরাটের ভয়াল স্মৃতিই বারবার ফিরে ফিরে আসে। ভারত যখন আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নসিহত খয়রাত করে তখন বজরং, হিন্দুসভা ও অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর নির্মম নিপীড়নে তড়পাতে থাকে মজলুম মানবতা। দলিত ভয়েসের সম্পাদক ভি টি রাজশেখর হিন্দু জঙ্গিবাদের বিষাক্ততা উপলব্ধি করে লিখেছিলেন, ‘জন্মসূত্রে আমি একজন হিন্দু। কিন্তু এখন আর আমি হিন্দু নই, আমি একজন মানুষ। কোনো হিন্দু মানুষ হতে পারে না।’ ভারতের আজকের বাস্তবতা আসলে এমনই। যে দেশের মানুষ অতি পবিত্র জ্ঞানে গবাদি পশুর মলমূত্র পান করে তাদের মন-মানসিকতা তো চরম জঘন্য ও কুৎসিতই হবে, এটাই স্বাভাবিক।
ভূখ-গত দিকে থেকে ভারত বিশাল একটি দেশ। ২৮টি রাজ্য আর ছয়টি প্রাদেশিক সরকারের এ দেশটিতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। মুসলিমরা হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি। এছাড়া আছে শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও নানা আদিম ধর্মাবলম্বী জাতি ও নৃ-গোষ্ঠী। ১৯৪৭ সালে দখলদার ইংরেজ কর্তৃক দেশটির সর্বময় কর্তৃত্ব হিন্দুদের হাতে সমর্পণের পর থেকে ওই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ও সংঘর্ষ বিরাজ করছে। দেশভাগের ওই সময়টিতে হিন্দুদের হাতে প্রচুর মুসলমান প্রাণ হারান। সহায়-সম্পদ হারিয়ে বিপুল মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও তৎকালীন পূর্ব বাংলায় হিজরত করতেও বাধ্য হন। ইতিহাসের ভয়াল সেই নৃশংসতায় অদ্যাবধি ভাটা পড়েনি।
মরছে মানুষ বেশুমার
দাঙ্গা-হাঙ্গামা বুঝাতে আমরা সাধারণত ‘মারামারি’ শব্দটা ব্যবহার করি। যেখানে ‘মারা’ এবং ‘মারি’
অর্থাৎ দুই পক্ষের যৌথ সংঘাত-সংঘর্ষকে বুঝানো হয়। ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ কথাটির মধ্যেও এ ধরনের কিছু বুঝানো উদ্দেশ্য হতে পারে। কিন্তু ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আসলে মারা হচ্ছে এক পক্ষে আর মরছে অন্য পক্ষ। সুতরাং দাঙ্গা বা মারামারি কথাটা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরে চলছে সাম্প্রদায়িক নিধনযজ্ঞ। সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্যে, উগ্রবাদী হিন্দুদের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ সাধারণ মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নগরকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে মুসলিমবিরোধী তৎপরতার মাত্রা চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।
মুসলিমবিরোধী এ দাঙ্গার ঘটনার সূত্রপাত ঘটে কাউয়াল গ্রামে যখন কয়েকশ’ হিন্দু কৃষক একত্রিত হয়ে কথিত হিন্দু হত্যাকা-ের বিচার দাবি করতে থাকে। ‘বউ-বেটি সম্মান’ নামে এক জনসমাবেশে হিন্দু জাঠ সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক মানুষ দূর দূরান্ত থেকে যোগ দিতে আসে। সেখানে নেতৃস্থানীয় হিন্দুদের জ্বালাময়ী ভাষণে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়ানো হয়। আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, উগ্রপন্থী এ লোকগুলোর দাবি ছিলো, ‘গত মাসে একটি হিন্দু মেয়েকে মুসলমান ছেলেরা উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গেলে মুসলমানদের হাতে কয়েকজন হিন্দু নিহত হয়।’
হিংসাত্মক আক্রমণের তৃতীয় দিনে মুজাফফরনগরের অবস্থা সম্পর্কে বিবিসি জানাচ্ছে, হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর মতো কোনও মাল-মসলারই সেখানে অভাব নেই। প্রদেশটির একের পর এক গ্রাম থেকে আতঙ্কিত মানুষ ট্রাক্টর বোঝাই হয়ে ভিড় করছেন সদরে। প্রত্যন্ত এলাকার বহু গ্রাম জনশূন্য, জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি থেকে এখনও ধোঁয়া উঠছে। দাঙ্গায় প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এখনও প্রচুর মানুষ নিখোঁজ আছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে। শুধু মুজাফফরনগর নয়, দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের জেলাতেও। শামেলি জেলার ম্যাজিস্ট্রেট পি কে সিং বলেন, শামেলিতে দাঙ্গার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে একজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা রেকর্ড করেছে পুলিশ।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে উত্তর প্রদেশ সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য। চিনিকলের জন্য সুপরিচিত জেলাটিতে প্রচুর আখের খেত আছে। সেখানে প্রায় ২১ কোটি মানুষের
বসবাস। রাজধানী দিল্লি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রদেশটির দাঙ্গা-আক্রান্ত মুজাফফরনগর জেলাতে বহু মুসলমান বাস করেন। ভারতের যেসব প্রদেশ মাঝেমধ্যেই হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার কবলে পড়ে উত্তর প্রদেশ তার একটি। এখানে চলতি বছর এরই মধ্যে ৪৫১টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে আর গত বছর দাঙ্গার সংখ্যা ছিলো ৪১০টি।
যেভাবে সূত্রপাত
একটা ফেইক পাকিস্তানি ভিডিওকে বিজেপি [এমএলএ] এবং উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী হিন্দুসভা ফোর্স অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে দাঙ্গা বাধানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। ফেসবুকে ছড়ানো ওই ভিডিওটিতে বোনের সম্ভ্রম রক্ষার্থে ভাইয়ের জীবনহানির ঘটনা দেখানো হয়, অথচ এটি পাকিস্তানের অন্য একটি ঘটনার ভিডিও। এর সঙ্গে হিন্দুগোষ্ঠী বা ভারতের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১ সেপ্টেম্বর থেকেই উগ্রবাদী হিন্দুরা সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে অপপ্রচার চালাতে থাকে। ‘ডব ঃযব ঐরহফঁং’ নামের একটি পেজ থেকে ‘২ যরহফঁং সবৎপরষবংংষু নবধঃবহ ঃড় ফবধঃয’ নাম দিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করে দাবি করা হয়, এক হিন্দু মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে এগিয়ে আসা দুই হিন্দু যুবককে দেড়শ’ মুসলমান পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ভিডিওটি কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় ৫ হাজার আইডি থেকে শেয়ার করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জানা যায়, ভিডিওটি আসলে ওই ঘটনার নয়, বরং ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তানের শিয়ালকোটের একটি ঘটনার। টুসার্কেলস ডটনেটে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
মুনাব্বর জানেন না
ফিরতে পারবেন কিনা?
মুজাফফরনগরের সব চেয়ে শোচনীয় এলাকা খুতবা গ্রাম। সেখান থেকে কয়েকজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ লোকগুলোর শরীরে আঘাত ও পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। ওই গ্রামের দোকানপাট ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় উগ্রপন্থী হিন্দু জঙ্গিরা। মনসুরপুরে গুলিবিদ্ধ এক মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। তবে প্রশাসনের দাবি, ‘শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে সিআরপি ও পুলিশ’। হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫২ জনকে।
ভারতের সরকারি তরফে অনেক কথাই
বলা হচ্ছে, কিন্তু মানুষ এখনও আতঙ্কিত। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এসব লোকজন উগ্রবাদী হিন্দুদের হামলার দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছে না। মুজাফফরনগরের হাসপাতালে শুয়ে মুনাব্বর, অনুবেশ বালিয়ানরা জানিয়েছেন তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। খুতবা গ্রামের বাসিন্দা মুনাব্বর অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার পরিবারকে। আর ওই সময় তাদের ওপর হামলা চালায় হিন্দু জঙ্গিরা। রড, লাঠি ও দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে আহত হন মুনাব্বর, তার স্ত্রী ও আট মাসের সন্তান। তারা এখন হাসপাতালে ভর্তি। আর কোনোদিন গ্রামে ফিরতে পারবেন কিনা জানা নেই তার।
সারারাত মাঠে লুকিয়ে থেকে হিন্দু জঙ্গিদের হামলার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন অনুবেশ বালিয়ান। লাঠি, তলোয়ার নিয়ে তার ওপরেও চড়াও হয়েছিলো উগ্রবাদী হিন্দুরা। পরদিন সকালে সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে।
রাজনীতির বলি সাধারণ মানুষ
মাত্র একমাস আগে কাশ্মিরের কিশওয়ারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর দুই সপ্তাহ আগে উত্তর প্রদেশে হিন্দুত্ববাদীদের অযোধ্যা যাত্রাকে কেন্দ্র করে ছড়ানো উত্তেজনার পর এবার মুজাফফরনগরের মুসলিম গণহত্যায় যেন ২০০২ সালের ফিকে হয়ে যাওয়া গুজরাট স্মৃতিই ফিরে আসছে... বৃহত্তম গণতন্ত্র ও বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষতার দেশে ২০০২ সালে যখন মুসলমানদের নির্বিচার কচুকাটা করা হচ্ছিলো তখনও ছিলো নির্বাচনের ঘনঘটা। এবারও তাই।... ওইবার বিজেপি জিতেছিলো সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে, এবারও কি তেমনটিই ঘটতে যাচ্ছে? এমন অভিযোগ খোদ ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টির। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ‘এ দাঙ্গা উদ্দেশ্যমূলক এবং বিজেপি কর্তৃক সংঘটিত। তারা আগামী ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে উগ্র হিন্দুদের ভোট পাওয়ার জন্য গুজরাটের পুনরাবৃত্তি করছে। ওই দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে চরমপন্থী হিন্দুদের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় আসে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি... বলা বাহুল্য, ধর্মীয় এই বিভাজন রেখায় লাভ হচ্ছে জঙ্গিবাদী বিজেপি তথা সঙ্ঘপরিবারের। মুজাফফরনগরের জনৈক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের চরম দুঃস্বপ্ন এখন সত্যি হতে চলেছে।’
মুজাফফরনগর রাজ্যের বিরোধী দল ‘বহুজন সমাজ পার্টি’র নেতা মেঘবতী বলেন, এ দলগুলো এমনিতে ভোট পাবে না বুঝে এখন দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে ভয় ছড়াতে চাইছে, বিশেষ করে উগ্রপন্থী হিন্দুদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
মেঘবতী দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান রাজ্য সরকার খুব দেরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার ১০ দিন ধরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে দিয়েছে এবং আমি এটা বলতে পারি, তারা রাজ্যে জঙ্গলের শাসন জারি করেছে।’
আলীগড়ভিত্তিক মুসলমানদের সংগঠন ‘মিল্লাত বেদারি মুহিম কমিটি’ প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সরকারের পদচ্যুত করার দাবি জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর শাসনের পরিবর্তে তারা রাষ্ট্রপতির শাসন চেয়েছে।
গণহত্যা যাদের নিয়তি
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ভারত ব্যাপক প্রোপাগান্ডা ছড়ালেও মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় চোখ বন্ধ করে থাকে রাষ্ট্র ও প্রশাসনযন্ত্র। দেশটির পুলিশ ও ব্যুরোক্রেসির মধ্যে একটা চক্র আছে, যারা ভীষণ সাম্প্রদায়িক। এরাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বারেবারে এ ধরনের ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। স্মরণযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, গুজরাটে ২০০২ সালে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম গণহত্যা চালানোর হুকুমের আসামী নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার অন্যতম দাবিদার। গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সেখানকার অসহায় সাধারণ মানুষ হত্যাকা-ে অভিযুক্ত হয়েও ধর্মনিরপেক্ষ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এই মানুষরূপী জানোয়ার! ভারতীয় হাইকোর্ট নরেন্দ্র মোদিকে গণহত্যার মামলা থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছে।
প্রায় ২ হাজারের অধিক মুসলিম নিধনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা এবং তার ঘনিষ্ঠ লোক এ হত্যাযজ্ঞে অভিযুক্ত হবার পরও মোদী এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। ওই সময় শত শত মুসলিম নারীকে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। পরিবারের অন্য সদস্যের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছে অসহায় নারীদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিতাদের জীবন্ত দগ্ধও করা হয়। মুসলিম মহিলারা পুলিশের কাছে তাদের সম্ভ্রম রক্ষার আবেদন জানালে পুলিশ বলেছিলো, ‘তোমাদেরকে তো শেষমেষ মেরেই ফেলা হবে। তার আগে সম্ভ্রম থাকলো কি চলে গেলো তাতে কী?’ ইতিহাসের নির্মম ওই হত্যাযজ্ঞে উগ্রবাদী হিন্দু সন্ত্রাসীরা ৫৬৩টি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো। আড়াই লাখ মানুষ হয়ে পড়েছিলো গৃহহীন। কিন্তু আহমেদাবাদের গণহত্যাই ইন্ডিয়ার শেষ মুসলিম গণহত্যা নয়। গুজরাট, আসাম, কাশ্মির আর উত্তর প্রদেশের পর আর কোন প্রদেশের পালা আসে কে জানে? তেত্রিশ কোটি দেবতার এই মানচিত্রে খোদাপরস্ত মানুষের স্থান যে দিন দিন সংকীর্ণ ও সঙ্কুল হয়ে উঠছে!
চমৎকার
ReplyDelete